চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ সর্বদলীয় সুবিধাভোগী সেই সালাউদ্দিন ভোল পাল্টিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে চাঁদাবাজির কর্মকান্ড অব্যাহত রাখলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।
সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের হাত ধরে তার অপরাধ জগতের ডন হিসেবে উথান হলেও নুর হোসেন গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর রক্ষা করতে পারেননি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত রাব্বি মিয়া হত্যা মামলায় আসামি করা হয় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিনকে। এরপর থেকে সেই সালাউদ্দিন আত্মগোপনে চলে যায়। এতে ‘চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের পরিবহন মালিকÑশ্রমিক ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও দেখা যায় তাদের।
তবে তাদের অভিযোগ সালাউদ্দিন পালিয়ে গেলেও থেমে থাকেনি তার চাঁদাবাজি। আর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য অব্যাহত রাখতে আত্মগোপনে থেকেও কলাকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার অনুগত কয়েকজন সহযোগীকে দিয়ে চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে চাঁদাাবাজি অব্যাহত রেখেছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে অনেকেই অভিযোগ করছেন, সিদ্ধিরগঞ্জের আউলাবন এলাকার শফিক, রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে চলা গাড়ির মালিক মিনাল শেখ ও টিটুসহ কয়েকজন চাঁদাবাজ সালাউদ্দিনের হয়ে বিভিন্ন গাড়ির মালিক ও চালকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের জন্য পায়তারা চালাচ্ছে। তারা বলে, আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা থেকে চলে গেলে কি হয়েছে, আবার ক্ষমতায় আসলে দেখিয়ে দেয়া দেওয়া হবে।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ নেতাদের শেল্টারে গত ১৫ বছরে সুবিধা ভোগ করলেও বিএনপি নেতাদের সাথে ছবি তুলে নিজেকে বিএনপি সাজার চেষ্টা চালায় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন। চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ড থেকে মোটা অংকের মাসোহারা দিতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি আবু বকর সিদ্দিককে। তার বদৌলতে বিভিন্ন মামলা থেকে রক্ষা পায় সালাউদ্দিন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। অবশেষে গত ১১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত রাব্বি মিয়া হত্যা মামলায় আসামি করা হয় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিনকে। এই সুচতুর সালাউদ্দিন সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেনের নানান অপরাধ কর্মকান্ডের ডন ও তার একান্ত সহয়োগী ছিলেন। তার বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যায়। তার পর গঠিত হয় অন্তবর্তী সরকার। গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে সকল ধরণের চাঁদাবাজী ও নৈরাজ্য বন্ধ থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জে থেমে নেই বিগত দিনে সর্বদলীয় সুবিধাভোগী, সরকারী জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের কথিত সভাপতি সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজী।
তার শেল্টারদাতা আওয়ামীলীগ নেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও ভোল পাল্টে সে এখন নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে স্ট্যান্ডে নতুন গাড়ী ভর্তি ফি নামে চাঁদা আদায় ও মাসিক চাঁদাবাজী। গত ১৪ আগষ্ট বুধবার দুপুরে সরেজমিনে চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে গিয়ে চাঁদাবাজীর বিষয়টি জানতে চাইলে এ প্রতিবেদক সহ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সালাউদ্দিন অকপটে স্বীকার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলোচিত সাত খুনের পূর্বে ওই মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নূর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্যের অন্যতম সদস্য ছিলেন এই বিতর্কিত সালাউদ্দিন। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে মাদক স্পটের মাদক আনা-নেয়ার দায়িত্বটি পালন করতো সালাউদ্দিন। সাত খুনের পর নুর হোসেনসহ তার সাম্রাজ্যের সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
তখন এই সালাউদ্দিনও আত্মগোপনে চলে যায়।
নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনার পর দীর্ঘ ১০ মাস আত্মগোপনে থেকে আবারো এলাকায় ফিরে আসে সালাউদ্দিন। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের সহযোগিতায় চিটাংরোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় সালাউদ্দিন। সেই থেকে এই স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই বলে জানায় চালক ও শ্রমিকরা।
চিটাগাং রোড রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে এ স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই সালাউদ্দিন। এ স্ট্যান্ডে নতুন গাড়ী ভর্তি করতে হলে তাকে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
এছাড়াও প্রতি মাসে হাইয়েস গাড়ী থেকে ১৫’শ টাকা, নোয়া গাড়ী থেকে ৮’শ টাকা এবং প্রাইভেট কারের জন্য ৫’শ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিয়ে তার কাছ থেকে টোকেন নিয়ে গাড়ী চালালে কোথাও ট্রাফিক পুলিশ ডিষ্টার্ব করে না বলে জানান চালকরা।
মন্তব্য করুন