নারায়ণগঞ্জে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা, সিঁদুর খেলা, নাচ গান, আরতি প্রতিযোগিতা আর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্তি হলো পাঁচদিন ব্যাপী সানতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) শহরের বিআইডব্লিউটিএ’র ৩নং ঘাটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার আয়োজন করা হয়।
এই ঘাটে শহরের বেশিরভাগ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। বিকেল তিনটায় থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন।
বিজয়া দশমীতে অর্থাৎ শেষ দিনের আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকেই শহরের মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের ভিড় ছিলো। দিনব্যাপী চলে নানা পূজা- অর্চনা। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দশমীবিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, আমলা পাড়া পূজা মন্ডপ, উকিল পাড়া হোসিয়ারী পূজা মন্ডপ, সাহা পাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন পালপাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন নয়া মাটি পূজা মন্ডপসহ বেশে কিছু মন্ডপে চলে ভক্তদের আরতি আর রঙের হোলি খেলা। পরম ভক্তি নিয়ে নিজ নিজ মনের বাসনা জানিয়ে নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরান এবং মিষ্টি মুখ করান। পরে মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। এরপর বিসর্জনের জন্য সধবা নারীরা দেবীকে সাজান ফুল, সিঁদুর ও নানা অলঙ্কার দিয়ে।
সন্ধ্যার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ থেকে ট্রাক ও ভ্যানগাড়ি করে নগরীতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ শোভাযাত্রা গুলোয় যোগ দেন মন্দিরগুলোর পুণ্যার্থীরা। সেখানে ভক্তদের নাচ-গানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তারা রং ছিটিয়ে ও ঢাকঢোলসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি উলুধ্বনিতে উৎসবমুখর করে তোলেন পরিবেশ। শোভাযাত্রাগুলো শহরের বিআইডব্লিউটিএ’র ৩নং ঘাটে গিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটসমূহে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিসর্জনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পূজা কমিটির নিজস্ব ভলান্টিয়াররাও দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিরাপত্তার কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি টিম, সিভিল সার্জনের মেডিকেল টিম সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। যা বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এবারে পুজোয় আনন্দের কোন কমতি ছিলো না।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে এবার ২১৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জ একটি সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির জেলা। সকল উৎসব আমরা একসাথে উৎযাপন করে থাকি। শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড: সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড: আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিতোষ কান্তি সাহা, বাসুদেব চক্রবর্তী, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা, সহ-সভাপতি সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাপ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, চাষাঢ়া রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী একনাথানন্দ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য সচিব খোকন সাহা, বন্দর থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমরসহ প্রশাসন ও পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ আরো অনেকে।
মন্তব্য করুন