আলোকিত নারায়ণগঞ্জ, (জনি গোপ):
করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে, সেই ব্যক্তির শেষকৃত্যের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর কয়েকটি জায়গাতেই ইতিমধ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ভয়ে দেহ গোসল বা কাঁধে করে কবরস্থানে বা শ্মশানেও নিয়ে যেতে চাইছে না কেউ প্রশাসন যতক্ষণ না ব্যবস্থা করছে, ততক্ষণ করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী মৃত ব্যক্তির দেহ পড়েই থাকছে। এ হেন পরিস্থিতিতে সাহসিকতা ও দায়িত্বের অভূতপূর্ব পরিচয় দিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ শফিউদ্দিন প্রধান।
নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের নন্দীপাড়ায় মরহুম আলফাজ উদ্দিনের বাড়িতে প্রফুল্লা নাহা (৭১) নামে এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শুক্রবার ভোরের দিকে। বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে মৃত ব্যক্তির মরদেহ ধরতে এবং দাহ করতে কেউ এগিয়ে আসেন নি। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে যান ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাউন্সিলর শফিউদ্দিন তার সেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে লাশটি মৃতের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এবং একটি ভ্যানে করে লাশটি নিয়ে যান মাসদাইর শ্বশানে। সেখানে বেলা ৪টার সময় লাশটির দাহ কাজ সম্পন্ন করেছেন নিজে দাড়িয়ে থেকে।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন করোনা ভাইরাস ১৪নং ওয়ার্ড কমিটির সদস্য আবুল বাসার বাসেত, এস এম সিরাজ, তুহিন, খাজা রহমান, যুবকদের পক্ষে ওবায়দুর রহমান, হারুন অর রশিদ, রানা, বিল্লাল।
কাউন্সিলর শফিউদ্দিন জানান, দুপুরে বাড়িতে নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে সকল দোকানপাট বন্ধ করতে বলি এমন সময় আমাকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় প্রফুল্লা নাহা (৭১) মারা গিয়েছেন। তার শেষকৃত্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। তখন আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে নাসিকের এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে আমার টিম নিয়ে প্রফুল্ল নাহার মরদেহ ঘর থেকে বের করে মাসদাইর শ্মশানে নিয়ে যাই এবং গোসল শেষে বিকাল ৪টার দিকে তার দাহ সম্পন্ন করেছি।
তিনি জানান, প্রফুল্ল নাহা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়বেটিস রোগে ভুগছিলেন এবং কিছুদিন যাবৎ তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই করোনায় আক্রান্ত ভেবে কেউ তার শেষকৃত্যে এগিয়ে আসে নি।
তিনি আরো জানান, যে কোনো দূর্যোগ মোকাবেলায় এবং যে কোন পরিস্থিতিতে মানুষের সেবায় আমি সর্বদা নিয়োজিত আছি।
এদিকে, কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের মহৎ এ কাজে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। আর মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন বলেন, যেখানে কেউ এগিয়ে আসে নি, সেখানে আমাদের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান সাহেব এগিয়ে এসে মরদেহটি বিল্ডিং থেকে নিচে নামিয়ে শশ্মানে নিয়ে দাহ কাজ সম্পন্ন করিয়েছেন। তার মত জনপ্রতিনিধি থাকলে এলাকাবাসী সবসময় উপকৃত হবে। তার জন্য আমরা আমাদের মন থেকে দোয়া করি তিনি যেন এভাবেই সারা জীবন গরীব দুঃখী আর অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যেতে পারেন।
এদিকে নিহত ব্যক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বী হলেও তার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকার মন্দির কমিটি বা মহানগর ও জেলা পূজা কমিটির কোন নেতা তার মরদেহ দাহ করার ব্যাপারে এগিয়ে না আসায় এসকল কমিটি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এসময় কাউন্সিলরের মহৎ এ কাজ দেখে এবং এসকল কমিটিগুলোর কাউকে না দেখে স্থানীয়রা ক্ষোভের সুরে বলেন, কি লাভ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ বা মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন সহ বিভিন্ন মন্দির কমিটি করে এবং এ সকল কমিটির নেতা হয়ে ? যদি এসকল নেতারা একজন মৃত ব্যক্তি শেষ কৃত্যের সময় কোন ধরনের সহযোগীতাই করতে না পারেন।