আলোকিত নারায়নগঞ্জ, জনি গোপঃ
মৃত ব্যক্তির ‘লাশের কথা জানিয়ে টেলিফোনে মেসেজ পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় আমাদের কাজ। লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমরা যখন ঘরে ফিরি, তখন নিজেরাই বুঝতে পারি না জীবিত আছি কি না। সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমাসহ পুরো পোশাক পরে গরমের মধ্যে কাজ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য, তা বলে বোঝানো যাবে না। দমবন্ধ হয়ে আসে একেক সময়।
মৃতদেহ বাসা থেকে বের লাশ নিয়ে মাসদাইর কবরস্থানে কবর দেওয়া, হিন্দুদের শ্বশানে দাহ করা পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও কাছে আসেন না ভয়ে। তবে আমরা ভয় পাই না। এই মৃত ব্যক্তিরা তো আমাদেরই কারও না কারও স্বজন।’ কোভিড ১৯–এ (করোনা) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একের পর এক ব্যক্তির লাশের সৎকার করা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিক ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিউদ্দিন প্রধান আলোকিত নারায়নগঞ্জকে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন,গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনায় জানতে পারি, গত ১৩ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এক মাকে রাতের অন্ধকারে টাঙ্গাইলের সখীপুরে জঙ্গলে ফেলে যান সন্তানেরা (যদিও পরে পরীক্ষায় জানা গেছে, তিনি করোনায়-আক্রান্ত নন)। খুব কষ্ট হয় এ ধরনের ঘটনা শুনতে পেরে। যেখানে সন্তানেরা গর্ভধারিনী মাকে জঙ্গলে ফেলে আসে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু দোয়া করি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আর যাতে কাউকে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ মানুষের মনে ভয় তৈরি করছে। স্বজনেরাও ভয় পাচ্ছেন। আর কেউ মারা গেলে তাঁর স্বজনেরা যাতে ভয় না পান। তাঁর শেষ বিদায়টা নিয়ম মেনে করেন। লাশের পাশে থাকেন।
গত ২৪ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের (ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ফর দ্য সেফ ম্যানেজমেন্ট অব অ্যা ডেড বডি ইন দ্য কন্টেক্স অব কোভিড-১৯) সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি ভাইরাস ছড়ায় না। এখন পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। মৃতদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী জানাজা, দাফন বা সৎকার করা যাবে।
এ প্রতিবেদনের অন্যান্য তথ্য উল্লেখ করে সফিউদ্দিন প্রধান বলেন, মৃতদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো পরিবহনের দরকার নেই। মৃতদেহের গায়ে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছিটানোরও দরকার নেই। মৃতদেহ যিনি গোসল করাবেন, তিনি একটি মাস্ক, এক জোড়া গ্লাভস এবং একটি ডিসপোজিবল গাউন পরবেন। কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো সতর্কতা নেই। তাই তিনি বলেন, ‘আসুন, মৃত ব্যক্তিদের সম্মান দিই। আতঙ্কিত না হই। করোনা ভাইরাসে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁরা তো আমাদেরই কেউ। তাদের শেষ বিদায়টুকু সম্মানের হোক।