আলোকিত নারায়নগঞ্জ, জনি গোপঃ
নাসিক ১৪ নং ওয়ার্ডের নন্দীপাড়া এলাকায় করােনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম উত্তম সাহা, তিনি নন্দীপাড়া এলাকার মনির হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। এই বাড়িতেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল রাত ১ টার দিকে উত্তম সাহা মারা যান। মৃত্যুর সময় তার মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠান্ডা ছিল। গত দুইদিন আগে তাকে নারায়নগঞ্জ পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে চিকিৎসক তার লিভারে ইনফেকশনের কথা জানিয়ে কিছু ঔষধ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরে গত ২৭ এপ্রিল উত্তম সাহা শারিরীক যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকলে মৃতের পরিবার বাড়ির অন্য সকল প্রতিবেশীদের দরজায় সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকেন। কিন্তু কেউ দরজা খুলে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। মারা যাওয়ার পরেও তার লাশের শেষকৃত্য করার জন্যও আত্নীয়স্বজন প্রতিবেশী কেউ আসেনি।
মৃত উত্তম সাহার ছেলে শুভ সাহা জানান, বাবা আমাদের এই ভাবে ছেড়ে চলে যাবে আমরা কোনদিন ভাবতে পারিনি। বাবার মৃত্যুতে আমরা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছি। বাবা সারা জীবন মানুষের উপকার করেছেন। অথচ বাবা মারা যাবার পর কেউ কাছে আসেনি। আমার আত্মীয়রাও আসে নাই, সবাই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি ভোর ৬ টায় কাউন্সিলর সফি কাকাকে ফোন করি, সফি কাকা আমাদের ফোন পেয়ে সাথে সাথেই ছুটে আসছেন আমাদের বাসায়। তিনি বাবার লাশ বিল্ডিং থেকে নিচে নামিয়ে বাইরে নিয়ে আসেন, তারপর সেই লাশ শ্বশানে নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা তিনিই করেন। সকাল ৯ টায় লাশ শ্বশানে নেওয়া হয়। আমি বাবার মুখে আগুন (মুখাগ্নি) দিয়েছি, আর সফি কাকা আমার হাত ধইরা পাশেই ছিলেন। আমাদের কাছে বড় পাওয়া এটাই। সৎকারে যতটুকু নিয়ম পালন করা দরকার ছিল তার অনেকটাই করতে পেরেছি। আজ কাউন্সিলর’ সফি কাকা ছিল বলেই বাবার সৎকার করতে পেরেছি । বাবার করোনা রোগ না হওয়া স্বত্ত্বেও মারা যাবার আগে ও পরে কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন কেউ মারা গেলেই বলে করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। করোনা রোগের আতঙ্কে বাবা মারা যাবার পরেও কেউ আমাদের পাশে এসে দাড়ায়নি। আজকে আমাদের এই করুন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলর ও তাঁর দলের সদস্যরা এসে যে মহৎ হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমাদের পরিবার কাউন্সিলর ও তাদের সকল সদস্যদের মন থেকে মঙ্গল কামনা করছি। তাদের এই মহৎ কাজে ভগবান যেন সকল বিপদে তাদের সাথে থাকেন।
কাউন্সিলর সফিউদ্দিন প্রধান বেশ কিছুদিন ধরেই কোভিড–১৯–এ মারা যাওয়া রোগী, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয়—এমন রোগীর লাশ এবং অন্যান্য রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশেরও দাফন এবং দাহ করেছেন।
সফিউদ্দিন প্রধান মুঠোফোনে জানান, বর্তমানে ‘দেশের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ মারা গেলে আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশিরা ভয়ে কেউ কাছে আসে না। আমাকে মৃতের পরিবার থেকে ফোন করলে আমি আমার স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে যে ব্যক্তি যে ধর্মের অনুযায়ী তাকে সেই ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করার ব্যবস্থা করি। মানুষ মানুষের জন্য কথাটি এখন আর মানুষের মধ্যে নেই, দেশের মানুষ আজ ভয়ে কাতর। কিন্তু আমি আমার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাবো। কোন করোনার রোগই আমার দায়িত্ব থেকে আমাকে পিছু হটাতে পারবে না।