আলোকিত নারায়ণগঞ্জ, মো: সাইফুল ইসলাম সায়েমঃ
কিছুতেই যেন থামতে চাইছে না মরণঘাতি করোনা ভাইরাস। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নারায়ণগঞ্জে সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা ১০০১। যার মধ্যে শুধু সিটি কর্পোরেশনেই এ সংখ্যা ৬৩২। মহামারী অদৃশ্য এ দানবে আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গৃহবন্দী – কর্মহীনদের খাদ্য চাহিদা। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দেখুন দ্বিতীয় পর্ব….
আজ থাকছে ১৭ নং ওয়ার্ডের করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ খবর।
১৭ নং ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার লোকের বসবাস। যার মধ্যে ২০ হাজার ভোটার বাকীরা ভোটার নন। স্বস্তির খবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনো কেউ মৃত্যুবরণ করেনি এ ওয়ার্ডে। তবে বন্দরে প্রথম যে মহিলার মৃত্যু হয়েছিল তিনি ১৭ নং ওয়ার্ডের পাইক পাড়া এলাকা থেকেই আক্রান্ত হয়েছিলো বলে জানা যায়। ওয়ার্ডটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নি কেউ। তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ২ থেকে ৩ জন।
সম্প্রতি জিমখানা বস্তি উচ্ছেদের ফলে বস্তিবাসীদের অধিকাংশই ১৭ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া থাকছেন। নিতাইগঞ্জের পাশে হওয়ায় এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা বেশী, তার উপর যোগ হয়েছে জিমখানা বস্তিবাসীরা। ফলে এখানে কর্মহীন ও গৃহবন্দীদের মাঝে খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে।
তবে ওয়ার্ডবাসীর পাশে আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বেশী দানশীল কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী খাদ্য সহযোগীতা দিয়েছেন তিনি। তার ওয়ার্ডে ভোটার ২০ হাজার, তিনি ইতিমধ্যে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন ১৪ হাজার ৫শ পরিবারের মাঝে। কাউন্সিলর বলছেন, কে ভোটার কে ভোটার না তা এখন দেখার সময় নেই। আমার নেতা সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে আমি অসহায়দে জন্য মাঠে আছি, সবসময় থাকবো।
তিনি বলেন, আমি বাবু বেচেঁ থাকতে আমার ওয়ার্ডের কেউ না খেয়ে থাকবে না ইনশাআল্লাহ্। এছাড়াও সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারী খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সংসদ সদস্য, নারী কাউন্সিলরও এগিয়ে এসেছেন বলর জানা যায়।
কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল করিম বাবু আলোকিত নারায়ণগঞ্জকে জানান, করোনা সংক্রমনের শুরুতেই আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ১৫ হাজার মাস্ক, ১২ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, হ্যান্ডবিল বিতরণ সহ এলাকায় এলাকায় মাইকিং করেছি। এছাড়া ওয়ার্ডের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হ্যান্ডওয়াশ ও পানির টাংকি স্থাপন করে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খাদ্য সহায়তার বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, সম্প্রতি জিমখানা বস্তি উচ্ছেদের ফলে আমার ওয়ার্ডে চাপ পড়েছে। তাই খাদ্যের চাহিদা অনেক বেশী। কে ভোটার কে ভোটার না, তা দেখার সময় এখন না। যে ওয়ার্ডের ভোটারই হোক না কেন আমার ওয়ার্ডে বসবাস করে এমন কেউ না খেয়ে থাকবে না, আমি বাবু জীবিত থাকা পর্যন্ত। তাই সরকারী ত্রাণ সহযোগীতার পাশাপাশি নিজ আর্থায়নে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌছি দিয়েছি। ঈদের আগে আরো খাদ্য সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ১০৪২ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী পেয়েছি।
এছাড়া আমার নিজ্ব অর্থায়নে আরো ১৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিতে পেরেছি। যার কোনো কোনো প্যাকেটে ছিলো ৫ কেজি চাল, ৫ কেজি আটা, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল আবার কোনো প্যাকেটে ছিলো ৫ কেজি চাল, ১ কেজি তেল, ১ কেজি লবন, ৩ কেজি আটা, ১ কেজি চিনি।
এছাড়া শিশুদের জন্য শিশু খাবারের ব্যবস্থা, লকডাউনে থাকা পরিবারগুলোর সার্বিক খোজ খবর, খাবার ইত্যাদি পৌছে দেয়া, অন্যান্য রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা, প্রয়োজনীয় ঔষুধ সরবারহ করা, করোনা আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়র মৃত্যুবরণ করলে দাফনের জন্য দাফন কমিটি করে দেয়া সহ করোনা পরিস্থিতিতে আমৃত্যু ওয়ার্ডবাসীর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার জীবন থাকতে কেউ না খেয়ে থাকবে না। যে কোনো প্রয়োজনে কল করার অনুরোধ জানান তিনি।
কাউন্সিলর বাবু বলেন, খিচুরী চাল, পোলার চাল, তেল, চিনি, সেমাই, মুগডাল, লবন ও দুধ এ আটটি আইটেমের সমন্বয়ে আমি প্রতি বছর যে ঈদ সামগ্রী দিয়ে থাকি তা এবারও চলমান থাকবে। সবার ঘরে ঘরে ঈদ সামগ্রী পৌছে দেয়া হবে।
এছাড়াও মধ্যবিত্ত অনেকের ঘরে ফোন কলের মাধ্যমে গোপনে গোপনেও খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন এ কাউন্সিলর।
সবশেষে কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন, করোনা মোকাবেলায় সচেতনতাই সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন। তাই সকলে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। ওয়ার্ডবাসীসহ সকলের কাছে হাত জোড় করে মিনতি করি, বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আমি বাবু আপনাদের জন্য বাইরে আছি, আপনারা ঘরেই থাকুন।