আলোকিত নারায়ণগঞ্জ, শিহাব আহমেদঃ
ইউরোপ, অ্যামেরিকার মতো অনেক ভয়ংকর না হলেও আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। প্রতিদিন আমরা খারাপ অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে,সাথে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
আমদের নারায়নগঞ্জের অবস্থা খুব একটা ভালো না। ইতিমধ্যে আমাদের নারায়ণগঞ্জকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের নাম শুনলেই আতংকিত হয়ে পড়ছে সবাই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার সামনেই যেতে চাইছেন না কেউ, এমনকি পরিবারের লোকেজনও এগিয়ে আসছেন না। দেশে করোনা এমন আতংক সৃষ্টি করেছে যে মানুষ সাধারণ মৃত্যুতেও সামনে যেতে ভয় পাচ্ছে। যার ফলে মৃত ব্যাক্তির দাফন কার্যক্রম অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
সঙ্কটময় এ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে অনেকে এগিয়ে এসে মানবতার অনন্য দৃষ্টি স্থাপন করেছেন৷ এরই ধারাবাহিকতায় এবার এগিয়ে এসেছেন ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। নিজ উদ্যোগে তারা খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছেন মৃত ব্যাক্তির বাসায়।
ব্যাক্তিগত ভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে মৃত ব্যাক্তির গোসল থেকে শুরু করে দাফন কার্য পর্যন্ত সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তারা শুধুই মানবিকতার খাতিরে এই কাজ করে যাচ্ছেন।
তাদের কারও কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই তারা নিজ থেকে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের মুল উদ্দেশ্য হল দেশের এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকা। কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট দুর করার চেষ্টা করা।
তারা মৃত ব্যাক্তির দাফন কার্যক্রমের পাশাপাশি অসহায় মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন।মানুষদের বিভিন্নভাবে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তারা খুব গোপনীয়তা অবলম্বন করে এলাকার প্রায় ২০০ পরিবারের কাছে পৌছে দিয়েছেন উপহার সামগ্রী। সামনে ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের সামর্থ অনুযায়ী আরও কিছু পরিবারের পাশে তারা দাড়াতে চান।
এই স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা হলেন, উদ্যোক্তা প্রকৌশলী মোঃ শাকিল ও শিশির। সেচ্ছাসেবক সদস্য– সোহেল, কাইয়ুম,মুফতি নূর মোহাম্মদ, রাসেল, সজিব, আনোয়ার, আজিম।
সহায়তায় এবং উপদেষ্টা প্রকৌশলী মোঃ মনির হোসেন, প্রকৌশলী মীর ইমাম উদ্দিন বাবু, ইসমাঈল, নাসির উদ্দিন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা প্রকৌশলী শাকিল রায়হান বলেন, ”আমরা এই বিপদের সময় শুধু মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আমরা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই কাজ করে যাচ্ছি।এই কাজের বিনিময়ে কোন সুনাম অর্জন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের দ্বারা যদি কোন মানুষের কিছুটা উপকার হয় তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। এই বিপদ কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এভাবেই মানুষের পাশে থাকতে চাই।” স্বেচ্ছাসেবী এ দলের পাশে এলাকার অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তাদেরকে সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি মানসিক ভাবে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন।
৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ বাতেন তালুকদার তাদের বিভিন্নভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন৷ তিনি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার নিজ এলাকায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই এলাকা অনেক জনবহুল এবং পাশাপাশি একের অধিক বাজার থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তাকে। তারপরও তিনি বিভিন্নভাবে মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তার এলাকায় কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের কাজ দেখে এলাকার সবাই বলছেন পৃথিবীর মাঝে যে এখনও মানবতা বেচে আছে এটা তার উৎকৃষ্ট প্রমান।