আলোকিত নারায়ণগঞ্জ, শিহার আহমেদঃ
মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি গ্রামীন ফোনের বহুল প্রচলিত একটা বিজ্ঞাপন আছে “স্বপ্ন বাড়ি যাবে এবার” গানটা যেন অধিকাংশ বাঙ্গালির সাথে মিলে যায়। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের পরিবার পরিজন রেখে গ্রাম থেকে শহরে আসে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে অনেক গার্মেন্টস থাকার ফলে এর প্রভাবটা যেন একটু বেশি। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য গ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে ছুটে আসে।
পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবার জন্য নিজে কষ্ট করে একা থাকে যাতে করে পরিবারের সবাই সুখে থাকতে পারে৷ সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর যখন ঈদে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে একবুক স্বপ্ন। সবাইকে আবার কাছে পাবার স্বপ্ন, সবার সাথে একসাথে ঈদ করার স্বপ্ন। ঈদের ছুটি হবার পর কারও যেন আর দেরি সহ্য হয়না। কখন বাড়ি ফিরবে? কখন সবাইকে এক নজর দেখবে? যখন তারা ঈদ করার জন্য বাড়ি পৌছায় তখন যেন তাদের সারা বছরের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
সারা বছর পরিবার পরিজনের কাছ থেকে দূরে থাকার কষ্ট দূর হয়ে যায় কিন্ত এবার আর ঈদে তাদের বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। সারা পৃথিবীকেই করোনাভাইরাস তার ভয়ংকর থাবায় গ্রাস করেছে। বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশও। দিন দিন আমাদের পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। প্রথমে পুরোপুরি লকডাউন ছিল দেশ।বর্তমানে লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও এখনও বন্ধ আছে সারাদেশের গনপরিবহন। গনপরিবহন ৩০মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছে সরকার।
এছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ডিএমপি ঘোষনা দিয়েছে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউকে বের হতে এবং ঢাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যার ফলে এবার ঈদের ছুটিতে আর ঘরে ফেরা হবে না লাখ লাখ মানুষের। দেখা হবে না নিজের সন্তানের মায়াভরা মুখ, দেখা হবে না মা বাবাসহ এবং পরিবারের সবার সাথে।
যদিও লকডাউনের শুরুতে কিছু মানূষ গ্রামে চলে গিয়েছিল আবার তারা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরে এসেছেন কিন্ত যারা করোনা সম্পর্কে প্রথম থেকেই সচেতন ছিলেন তারা নিজেদের এবং পরিবারের সবার জীবন বাঁচানোর জন্য থেকে গেছেন ঢাকাতেই। ভেবেছিলেন লকডাউনের শেষে এবারের ঈদে বাড়ি ফিরবেন। সবার সাথে ঈদ করবেন যাতে তাদের দুঃখগুলো লাঘব হয়ে যায়।
এবারের ঈদে বাড়ি ফেরা হবে না জেনে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। করোনা ভাইরাসের কারনে তারা নিজেদের এবং গ্রামে থাকা পরিবার নিয়ে অনেক দুশচিন্তার মধ্যে আছেন। সবাই হয়তো ভেবেছিলেন এবারের ঈদে বাড়ি ফিরলে সবার সাথে দেখা হবে এবং তাদের দুশচিন্তগুলো কেটে যাবে কিন্ত সে আশায় গুড়েবালি।
এবারের ঈদ যে তাদের ঢাকাতেই একা একা কাটাতে হবে। ঈদে বাড়ি ফিরতে না পারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক গার্মেন্টস কর্মী আল মামুন বলেন “ভাই জীবনেও এমন ঈদ কাটাইনি। সারাবছর বাইরে থাকলেও ঈদটা পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে কাটাতাম। এবার আর গ্রামে যাওয়া হবে না। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে মাফ করে দেন। জীবনে যাতে কোনদিন কারও এমন ঈদ আর না আসে।”
আল মামুনের মতো এমন কয়েক লাখ শ্রমিকের বসবাস আমাদের নারায়ণগঞ্জে। তার মতোই সবার একই অবস্থা। সবাই খুব হতাশ। তারা সবাই যেন আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। সবাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। সবার যেন একটাই চাওয়া মহান আল্লাহ যেন সবাইকে মাফ করে দেয়। পৃথিবীটা আবার আগের মতো করে দেয়।
তবে প্রশাসনের শত বাধা সত্ত্বেও কিছু মানুষ ছুটে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। মাওয়া এবং দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে দেখা যাচ্ছে গ্রামে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভীড়। যা আমাদের দেশের সবার জন্য অনেক বড় অশনিসংকেত। অনেকেই বুঝতে পারছেন না এর ফলে তারা নিজেদের সাথে সাথে পরিবারের সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন৷ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তাহলে সারা বছর এত কষ্ট করে কি লাভ? যদি আমার নিজের জন্য পরিবারের বাকী সবাই মৃত্যু ঝুকিতে পড়ে। যেহেতু করোনাভাইরাসের ঔষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি তাই সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্ব্বোচ্চ সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে, তা না হলে আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপদ।