আলোকিত নারায়নগঞ্জ, শিহাব আহমেদঃ
বেঁচে থাকলে আজ ২৯মে ৬৯ বছরে পা দিতেন কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন একজন সত্যিকারের অভিনেতা। তিনি কখনও নায়ক, কখনও ভিলেন আবার কখনও কমেডিয়ান হিসেবে মানুষের মন জয় করেছেন।
নিজের চরিত্রকে এতো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে দর্শকরাও হারিয়ে যেতেন সেই অভিনয়ের মায়া জালে। দাপটের সঙ্গে খল চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন। সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেও যে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেয়া যায় তা হুমায়ুন ফরীদি প্রমান করে গেছেন। ইতিবাচক চরিত্রেও তার অভিনয় ছিল অতুলনীয়। শুধু সিনেমা নয়, টেলিভিশন নাটক এবং মঞ্চেও তাঁর অভিনয় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন দর্শকরা। বাংলা নাটক, মঞ্চ, সিনেমা কোথায় নেই তার পদচিহ্ন ।
মানুষ বাঁচে তার কর্মে। এই কথাটার অন্যতম উদাহরন যেন হুমায়ুন ফরীদি। এখনও তার অভিনয় নাড়া দেয় মানুষকে। এখনও তিনি বেঁচে আছেন সকল মানুষের হৃদয়ে। এখনও মানুষ নাটক ও সিনেমার মাঝে তাকে খুঁজে বেড়ায়।।
জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব-কৈশোরে স্থায়ীভাবে তার থাকা হয়নি ঢাকায়। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আরও অসংখ্য জেলায়। ছোটবেলায় অনেক দূরন্ত ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি৷
হুমায়ুন ফরীদির ডাকনাম পাগলা, সম্রাট, গৌতম প্রভৃতি। ফরীদির অভিনয় জীবন শুরু মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।ঢাকা থিয়েটারের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির মঞ্চযাত্রা শুরু হয়। চা আনা আর কস্টিউম পরিয়ে দেয়া পর্যন্ত ছিল তার প্রাথমিক গণ্ডি। আর সেলিম আল দীনের ‘চরকাঁকড়ার ডকুমেন্টারি’ নাটকের প্রোডাকশনে কাজ করেন। এরপর একই দলের একই লেখক ও নির্দেশকের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রে সুযোগ পান ফরীদি। তারপর ‘শকুন্তলা’, ‘ফণীমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’ এবং ১৯৯০ সালে ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় হুমায়ুন ফরীদির ঢাকা থিয়েটার জীবন।
হুমায়ুন ফরীদি টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকে। এরপর তিনি কাজ করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় টিভি নাটকে। ১৯৮৫ সালের দিকে হুমায়ুন ফরীদি অনুধাবন করেন তিনি আসলে অভিনয় ছাড়া আর কিছু করতে পারবেন না। অন্য কিছু থেকে রোজগার করে জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। তার একমাত্র অবলম্বন কিংবা পুঁজি হচ্ছে অভিনয়।
১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তার অভিনীত প্রথম ছবি হলো তানভীর মোকাম্মেলের “হুলিয়া”। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। চলচ্চিত্রে কাজ না করলে হয়তো যাত্রা দলে ভিড়ে যেতেন তিনি। এমন প্রস্তুতিও ছিল তার মধ্যে।
ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরীদি দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০র দশকে। স্বাধীনতার পর রমনায় প্রথম স্ত্রী মিনু ওরফে নাজমুন আরা বেগমের সাথে বেলী ফুলের মালা বদল করে বিয়ে করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ‘দেবযানী’ নামের তাঁর এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও তাঁদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে। ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন হুমায়ুন ফরিদী। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৩ তারিখে এই অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময়ে তিনি নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন।
আজ কিংবদন্তী হুমায়ূন ফরিদীর জম্নদিন। শুভ জন্মদিন কিংবদন্তী। এমন দিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরন করছে আলোকিত নারায়নগঞ্জ।