আলোকিত নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক নেতারা। আলোকিত নারায়ণগঞ্জের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নিন্দা জানায়। একইসাথে জনপ্রিয় এ অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো অবিলম্বে চালু করে দিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। তবে অনলাইন পোর্টালগুলো আসলেই বন্ধ নাকি সার্ভারে কোনো সমস্যা নাকি অন্য কোনো সমস্যা তা নিয়েও দ্বিমত পোষণ করেন অনেকে।পোর্টালগুলো বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং দৈনিক খবরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক এডঃ মাহাবুবর রহমান মাসুম বলেন, পোর্টালগুলো কেন বন্ধ তা আমরা কেউ জানি না। তবে এভাবে বন্ধ করাটা অনৈতিক। সংবাদপত্রের উপর হস্তক্ষেপ বিশেষ করে চলমান এ কঠিন সময়ে সাংবাদিকদের সঠিকভাবে কাজ করতে না দিলে সমস্যা বাড়বে বা জটিলতা বাড়বে। যারা বন্ধ করেছে অন্যায়ভাবে বন্ধ করেছে, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
একই বিষয়ে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ডান্ডিবার্তার সম্পাদক-প্রকাশক হাবিবুর রহমান বাদল বলেন, অনলাইন পোর্টালগুলো আসলেই বন্ধ কিনা পোর্টালগুলোর পক্ষ থেকে কেউ ক্লিয়ার করে কিছু বলছে না। তবে কোনো অনলাইন পোর্টাল বা গণমাধ্যম এভাবে আকষ্মিক বন্ধে আমি তীব্র নিন্দা জানাই। যদি কারো সাথে নিউজ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকে তবে প্রতিবাদ দিতে পারে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি স্বাধীণ সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী এবং সাংবাদিকরাও গঠনমুলক সংবাদ প্রকাশ করবে এটা বিশ্বাস করি।
প্রেসক্লাবের আরেক সাবেক সভাপতি ও চ্যানেল আই’র জেলা প্রতিনিধি রুমন রেজা বলেন, কি কারণে পোর্টালগুলো বন্ধ আমরা তা জানি না। তবে এটা খুবই দুঃখজনক। এদের প্রচুর পাঠকপ্রিয়তা ছিলো এবং আমাদের একটা অভ্যাস দাড়িয়ে গিয়েছিলো পোর্টালগুলো নিয়মিত দেখার। পাঁচটা অনলাইন জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিলো। আমি মনে করি, মানুষকে খবর থেকে বঞ্চিত না করে দ্রুত পোর্টালগুলো খুলে দেয়া হোক। মানুষ যাতে পোর্টালগুলো দেখতে পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
নারায়নগঞ্জে ৫টা পোর্টাল বন্ধের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক শীতলক্ষা পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক আরিফ আলম দীপু বলেন, যে কোন ব্যাপারে মুক্ত স্বাধীনতা থাকে, লেখার স্বাধীনতা, বলার স্বাধীনতা। আর এ ৫ টি পোর্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার।
নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের পর পর দুবার নির্বাচিত সভাপতি ও এটিএন বাংলা’র জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সালাম প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, প্রকৃত অর্থে কেন ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ সে সম্পর্কে পোর্টালগুলোর পক্ষ থেকে সাংবাদিক ইউনিয়নকে কিছু জানানো হয় নি। তবে আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং দ্রুত যাতে পোর্টালগুলো খুলে দেয়া হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক সোজা সাপটা পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক আবু সাউদ মাসুদ বলেন, “এ ব্যাপারে আমি পরিষ্কার কিছু জানিনা। পুরো ব্যাপারটা একটি ধোয়াশা। যাদের সাথে এই ব্যাপারটি ঘটেছে তারাতো এই ব্যাপারে কিছু বলছে না। পরিষ্কার কিছু না জেনে আমি মন্তব্য করতে পারিনা। তারা যদি বলে তাদের পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে তাহলে আমরা মাঠে নামবো কিন্ত এ বিষয়ে আগে তাদের পরিষ্কার করতে হবে”।
বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নিউ এজ’র জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, আমার পরিস্কার বক্তব্য হচ্ছে যে কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার ব্যাপারে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কারণ কোনো গণমাধ্যম যদি ভু্ল তথ্য পেয়ে কোন ভুল সংবাদ প্রকাশ করে তবে তা প্রতিকারের যথাযথ ব্যবস্থা আছে। প্রতিবাদ দিতে পারে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে, কিন্তু গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়াটা হলো চুড়ান্তভাবে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার শামিল। যারা বন্ধ করেছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অন্যদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তাহলে কি আপনারা গণমাধ্যম বিহীন এক সমাজ চান, যে সমাজ হবে বর্বর।
সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি বলেন, পাঁচটি অনলাইন পোর্টালই নারায়ণগঞ্জের অনেক জনপ্রিয় এবং খুবই প্রতিষ্ঠিত। প্রচুর পাঠকপ্রিয়তা আছে এবং আমি নিজেও নিয়মিত দেখি। এগুলো যে প্রক্রিয়ায় বন্ধ করা হয়েছে তা অভিনব প্রক্রিয়া। যদিও তাদের সাথে (পোর্টালগুলোর মালিকদের) আমার কথা হয়নি তারপরও আমি যতটুকু জানি, এগুলো টেকনিক্যালি বন্ধ করে রাখা হয়েছে, কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় নয় অনেকটা গায়ের জোরে। যেহেতু পাঁচটা ভিন্নধারার এবং মালিকও ভিন্ন তাই একটু সন্দেহ থেকে যায় আসলে কারা বন্ধ করেছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের আগ বাড়িয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। কেননা এভাবে বন্ধ হতে থাকলে তা হবে খুবই বাজে উদাহরণ। ভবিষ্যতে দেশের সকল অনলাইনের উপর এ ধরনের চাপ আসতে পারে। কারো স্বার্থ বিরোধী কোনো নিউজ হলে আইনি মোকাবেলায় না গিয়ে তারা এভাবে আড়ালে থেকে পোর্টাল বন্ধ করে দিতে পারে। দ্রুত এগুলো চালু করা হোক এবং এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন বলেন, কে বন্ধ করেছে আমরা তা জানিনা। কোনো ঘোষণাও আসে নাই। যাদের পোর্টাল তারা আমাদের জানায় নি, জানাতে হবে। এটা সার্ভার সমস্যা নাকি অন্য কিছু তা তো আমরা জানি না। যারা বলছে বন্ধ, তারা আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আনে নাই বা তারা মাঠে নাই। যদি আমার পোর্টাল বন্ধ হতো তবে আমি মাঠে দাড়িয়ে চালু করার দাবি জানাতাম। এখন আমরা কনফিউজড আসলে বন্ধ নাকি সার্ভার সমস্যা।
একই বিষয়ে জানতে দৈনিক সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম এ খান মিঠু’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।