আলোকিত নারায়ণগঞ্জ
২০১১ সালের এই দিনে পৃথিবীকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে পরাপারে পাড়ি জমান বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের উজ্জল নক্ষত্র পপ গুরু আজম খান। আজ নয় বছর হলো তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। তবে বাংলাদেশের মানুষ আজও তাকে ভুলতে পারে নাই৷ মানুষ যেন আজও যেকোন কনসার্টের মাঝে তাকে খুঁজে ফিরে। তিনি বিদায় নেয়ার নয় বছর হয়ে গেলেও তিনি যেন আজো বেঁচে আছেন প্রতিটা সাধারন মানুষের মনে, তাকে ধারন করেই যেন প্রতিটা ব্যন্ড দল বেড়ে উঠছে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ব্যান্ড সংগীতের আলাদা একটা জায়গা আছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যান্ড সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার পিছনে যাকে পথপ্রদর্শক হিসেবে ধরা হয় সে আর কেউ নয় পপগুরু আজম খান। পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান হলেও বাংলাদেশের সংগীত জগতে পপগুরু নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সঙ্গীতশিল্পীর বাইরে আজম খানের আরও বেশ কিছু পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, অভিনয়ও করেছেন। এছাড়া খেলাধুলাতেও তার বেশ আগ্রহ ছিলো।
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ সালে ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্ম নেওয়া আজম খানকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি।
১৯৭২ সালে আজম খান তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। তাঁর ব্যান্ড উচ্চারণ দেশব্যাপী এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকালিস্ট করে অনুষ্ঠান করেছেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানের এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে ও চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হলে ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তাদের গানের দল। ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে আজম খান বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলাদেশ শিরোনামের গান গেয়ে সারাদেশে হৈ-চৈ ফেলে দেন।
আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি
সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজম খানকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
পপসম্রাট গুরু আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে নয় বছর আগে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। পপ গুরুর মৃত্যু বার্ষিকীতে তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে আলোকিত নারায়ণগঞ্জ।