আলোকিত নারায়ণগঞ্জঃ
মাইকেল জ্যাকসন পৃথিবীর অন্যতম সফল সঙ্গীত তারকা। তাকে বলা হয় “কিং অফ পপ”। সঙ্গীতের নতুন এক ধারা, গানের কথা, গানের সঙ্গে নাচ, তার পোশাক, মঞ্চে তার পরিবেশনা মাইকেল জ্যাকসনের সব কিছুই ছিল দর্শকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। তিনি শুধু গান আর নাচের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। নিজের গানের কথা, সুর থেকে শুরু করে গানের মিউজিকও করেছেন। এমনকি তিনি মিউজিক ভিডিও নির্মাণের দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। তার গানের মিউজিক ভিডিওগুলো যেন এক একটা চলচ্চিত্র।
মাইকেল জ্যাকসনের পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। ১৯৫৮ সালের ২৮ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন এই পপ সম্রাট। জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন এবং ক্যাথরিন জ্যাকসন দম্পত্তির সন্তান তিনি। মাইকেল জ্যাকসনরা ৮ ভাই বোন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো তারা ৮ ভাই বোন সকলেই কোন না কোন সময় সঙ্গীতের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৩ সালে ৫ ভাই বোন মিলে ” জ্যাকসন ফাইভ” নামক ব্যান্ড দল গঠন করেন। তখন মাইকেল জ্যাকসনের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর৷ সেই থেকে সঙ্গীতাঙ্গনে তার পথচলা শুরু। ১৯৭১ সালে মাইকেল জ্যাকসন একক শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন।
বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত অ্যালবামের মধ্যে মাইকেলের পাচটি অ্যালবাম রয়েছে। এগুলো হচ্ছে অফ দ্যা ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১), এবং হিস্টরি (১৯৯৫). বিশ্ব সঙ্গীতাঙ্গনে আশির দশকে মাইকেল জ্যাকসন জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছান। মাইকেল শুধু তার গানের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন না। তিনি তার নাচের জন্যও ছিলেন ভীষন জনপ্রিয়। গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। তার জনপ্রিয় নাচের মধ্যে ছিল রোবট ও মুন ওয়াক। মুনওয়াক মুলত সামনের দিকে পা ফেলে পিছনে হেটে যাওয়ার একটা কৌশল, যা দর্শকদের চোখে ভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মাইকেল জ্যাকসন দুবার রক এন্ড রোল হল অফ ফেইমে নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি পৃথিবীর একমাত্র ব্যাক্তি যিনি গান লেখা ও নাচের জন্য “আর এন বি” হল অফ ফেইমে যায়গা করে নিয়েছেন। মাইকেল জ্যাকসন ১৩টি গ্রামি এওয়ার্ড জিতেছেন। জ্যাকসন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এওয়ার্ড ও নোমিনেশন পাওয়া তারকা। ২০০৫ সালে চাদেও জমি কিনেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। প্রায় ১২০০ একরের প্লট কিনেছিলেন তিনি।
বিশ্ববিখ্যাত এই পপ সম্রাটের আজ ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৯ সালের ২৫ জুন এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি দেন এই কিংবদন্তি। তিনি বিশ্বব্যাপী এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে ২০০৯ সালে যখন তার মৃত্যু হয়, তখন সঙ্গীত বিশ্বের সব হিসেব বদলে যায়। সঙ্গীতের বেশীরভাগ রেকর্ড তার দখলে চলে আসে। সে বছর সর্বাধিক বিক্রিত অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে সারা বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। মৃত্যূর এক বছরের মাথায় শুধুমাত্র অ্যামেরিকাতেই তার অ্যালবাম বিক্রি হয় ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন কপি আর বিশ্বজুড়ে বিক্রির পরিমান ছিল ৩৫ মিলিয়ন। মৃত্যুর পর গান ডাউনলোডের ইতিহাসেরও রেকর্ড গড়েন তিনি। মাত্র এক সপ্তাহে টাকা খরচ করে জ্যাকসনের ১০ লাখ গান ডাউনলোড করেন তার ভক্তরা৷ এর আগে এত কম সময়ে কোন শিল্পীর এত বেশিসংখ্যক গান ডাউনলোড হয়নি। তার মৃত্যূর পর চাঁদের একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের নাম পরিবর্তন করে ‘মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন’ রাখা হয়। জ্যাকসনকে সম্মান জানাতেই এমনটা করেছিল ‘দ্যা লুনার রিপাবলিক সোসাইটি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান।
তার মৃত্যুতে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন পড়ে যায়। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাথার ওষুধ নেয়ার ফলে তার মৃত্যু হয় বলে ধারনা করা হয়। ২০০৯ সালে যখন তার মৃত্যু হয় সেই মৃত্যুর খবর ‘টিএমজেড’ তাদের ওয়েবসাইটে নিশ্চিত করে তখন তা সবজায়গায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যূর ফলে পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যাবস্থা এক প্রকার ভেঙে পড়ে। তার সম্পর্কে জানতে পৃথিবীর সকল দেশ থেকে তার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ গুগলে সার্চ করা শুরু করে। “Michael Jackson” শব্দটি এত বেশি ইনপুট হবার কারণে তারা ভেবেই বসে DDoS virus এ তাদের সার্চ ইঞ্জিন আক্রান্ত হয়েছে। যার ফলে তারা প্রায় ৩০ মিনিট গুগল বন্ধ রাখে।
মৃত্যুর ১১ বছর পাড় হয়ে গেলেও আজও সারা পৃথিবীর মানুষ মাইকেল জ্যাকসনকে ভুলতে পারে নি। মাইকেল জ্যাকসন তার গান, গানের মাঝে তার নাচ দিয়ে আজও তার কোটি ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। মাইকেল জ্যাকসনের ১১ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরন করছে আলোকিত নারায়ণগঞ্জ।