আলোকিত নারায়ণগঞ্জঃ
নবীনগর শাহ ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদ। মোঃ হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে খুব ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে শহর থেকে একটু দুরের এই উচ্চ বিদ্যালয়টি। ২০১৯ সালের এস.এস.সি পরিক্ষায় ১২৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১২৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে৷ পাসের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন। মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদ ১৯৯৮ সালে মুসলিম নগর কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার মাধ্যমে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন৷ এরপর ২০০২ সালে যোগ দেন হরিহর পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। দীর্ঘদিন সেখানে শিক্ষকতা করার পর ২০১৫ সালে নবীনগর শাহ ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার নেতৃত্বে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি। টেলিভিশনের ক্লাসের উপকারীতা, পড়ালেখার মান সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আলোকিত নারায়ণগঞ্জের সাথে৷ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ।
কেমন আছেন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি, সুস্থ আছি৷
করোনা মহামারীর কারনে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য সরকার টেলিভিশনে ক্লাস করার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কতটা কাজে আসছে বলে মনে করেন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের এই সিন্ধান্তকে আমি অনেক সাধুবাদ জানাই। তবে আমার কাছে মনে হয় টেলিভিশনের ক্লাসগুলো শহরের শিক্ষার্থীদের যতটা কাজে আসছে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য অতটা কাজে আসছে না কারণ গ্রামের শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা খুব বেশি সচেতন না। তারা অনেকেই জানে না কখন ক্লাসগুলো হচ্ছে। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে সরকার যতটা আশা করছে ততটা ফল হয়তো পাবে না। এই ব্যাপারে আমি আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলে দিয়েছি তারা যাতে অভিভাবকদের টেলিভিশনের ক্লাসগুলো সম্পর্কে অবহিত করে যাতে কোন শিক্ষার্থী এই ক্লাসগুলো থেকে বঞ্চিত না হয়।
বর্তমান সময়ে পাসের হার অনেক বেড়েছে। পাসের হারের সাথে পড়ালেখার মান কি বাড়ছে?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ না! পাসের হারের মতো পড়ালেখার মান বৃদ্ধি পায়নি কথাটি ঠিক তবে সরকার থেকে শুরু করে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে যাচ্ছে পড়াশোনার মান উন্নয়ন করার জন্য৷ মান বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন অবকাঠামোগত পরিবর্তন করছে৷ অনেক ক্ষেত্রেই এর সুফলতা আসতে শুরু করেছে। সময়ের সাথে সাথে মানও বৃদ্ধি পাবে৷
এস.এস.সি পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করা অনেক শিক্ষার্থী সাধারন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না৷ এই দায়টা আসলে কার?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ এ দায়টা আসলে কারও একার উপর দেয়া যাবে না। এর দায় সকলের৷ শিক্ষার্থীরা এখন শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা সিলেবাসের বাইরে কোন বই পড়তে চায় না। তাই তাদের জ্ঞানের পরিধি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের বাইরেও বই পড়তে হবে, শিক্ষকদের এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে এবং অভিভাবকদের এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে৷
নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে৷ বিষয়টি পড়ালেখার উপর কতটুকু প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ মোবাইল ফোন অনেক বড় একটা চিন্তার বিষয়। মোবাইল ফোন এতটা খারাপ প্রভাব বিস্তার করছে পড়ালেখার উপর যা অনেকের ধারনার বাইরে৷ আমিতো মনে করি আমার স্কুলের যে ফলাফল আমি আশা করেছিলাম তা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র মোবাইলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আসক্তির কারণে। আমি আমার নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমি মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে সন্ধার পর তাদের বাসায় যাই। একদিন এক শিক্ষার্থীকে দেখি পড়াশোনা না করে সে তার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। আমি সেই শিক্ষার্থীর মোবাইল সাথে করে বাসায় নিয়ে আসি। রাতে সেই শিক্ষার্থীর মা আমাকে ফোন করে জানায় আমি যেন তার সন্তানের মোবাইলটি দিয়ে দেই কারণ মোবাইল না দিলে সে নাকি ভাত খাবে না। চিন্তা করুন মোবাইলের কতটা খারাপ প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের উপর। আমার মনে হয় এই বিষয়ে যদি অভিভাবকেরা আরও সচেতন হয় তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
একজন প্রধান শিক্ষক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। এই বিষয়টি কতটা উপভোগ করেন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ যতদিন পর্যন্ত আমাদের অধ্যক্ষ হামিদা আলী ম্যাডামের ( স্কুলের কার্যকরী কমিটির সভাপতি) স্বপ্ন অনুযায়ী এস.এস.সি তে আমাদের স্কুলে শতভাগ সাফল্য না আসে ততদিন পর্যন্ত বিষয়টি আমার কাছে উপভোগ্য নয়। যেদিন এই স্বপ্ন পুরন করতে পারবো সেইদিন হয়তো আমি মন ভরে উপভোগ করতে পারবো৷
শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি কোচিং নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সেই বিষয়ে আপনার কি অভিমত?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ শিক্ষক যদি সঠিকভাবে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায় এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরশীল হতে হবে না। শিক্ষকদের ক্লাসে অবশ্যই ভালভাবে পড়াতে হবে৷ শিক্ষক যদি ক্লাসে সকল সমস্যার সমাধান করে দেন তাহলে কেন শিক্ষার্থীরা কোচিং-এ যাবে৷ আমি আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বার বার বলি শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো করে পাঠদান করান। আপনার সন্তানকে যদি মানুষ করতে চান বা স্বশিক্ষিত করে তুলতে চান তাহলে ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান করান কারণ আপনার সন্তানকেও আরেক শিক্ষক পাঠদান করাচ্ছে। আমি এ কথাগুলো আমাদের শিক্ষকদের যে ট্রেনিং হয় সেখানেও বলি।
করোনার কারনে সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটার কারনে অভিভাবকরা অনেক দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে৷ তাদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ অভিভাবকদের বলবো আপনারা দুঃশ্চিন্তা করবেন না। করোনাভাইরাস শুধুমাত্র শিক্ষা ক্ষেত্রে নয় পৃথীবির সকল ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। আমি অভিভাবকদের কাছে আলোকিত নারায়ণগঞ্জের মাধ্যমে বিশেষভাবে বলতে চাই আপনাদের সন্তানের প্রতি আরও সচেতন হন৷ এই সময়ে সন্তান কি করছে তা খেয়াল রাখুন৷ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। পড়ালেখা নিয়ে কোন আলোচনা থাকলে শিক্ষকদের সাথে ফোনের মাধ্যমে কথা বলুন। আশ্চর্যের বিষয় হলো স্কুলের শিক্ষকরা ফোন করে খোঁজ খবর নিলে অনেক অভিভাবক বিরক্ত হয়। কয়েকদিন আগে আমাদের বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা আমাকে বলল স্যার আপনার কথা অনুযায়ী এক অভিভাবককে ফোন দিয়েছি। সেই অভিভাবক বলে ফোন করে বিরক্ত করছেন কেন? আমি আবারও বলি দয়া করে সন্তানদের প্রতি আরও সচেতন হন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন?
মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদঃ শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ হলো পড়াশোনা করা৷ পড়াশোনার সাথে সাথে নৈতিক শিক্ষাও অর্জন করতে হবে। বড়দের সম্মান করতে হবে, পিতামাতাকে সম্মান করতে হবে। তারা যাতে সময়ের মুল্যটাকে অনুধাবন করতে পারে৷ ছাত্র জীবনের সময়টাকে যাতে ভালভাবে কাজে লাগায়।