অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তিতে ফতুল্লা বিএনপি জর্জরিত হলেও বিভেদ নিরসনে বিএনপির হাইকমান্ড একেবারেই উদাসীন। সংকট সমাধানে তাদের নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।
সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি ও শহিদুল ইসলাম টিটু- রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর কোন্দলের বিষয়টি এখন আর গোপন কিছু নয়। তা ইতিমধ্যই প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। উভয় গ্রুপ পৃথক পৃথক ভাবে সভা করছে। অপরদিকে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধূরী গণমাধ্যম কে জানিয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে মনোয়ন চাইবেন।
অন্যদিকে শিল্পপতি বিএনপি নেতা শাহাআলমের একটি বলয় রয়েছে। তাছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদেরও একটি গ্রুপ রয়েছে। সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্টে থাকা ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল টিটুর বিশাল গ্রপ রয়েছে।
তিনি জেলা যুবদলের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই একটি বিশাল গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে তার। তার অনুসারীরা বর্তমানে ফতুল্লার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ছাড়াও থানা পর্যায়ে বিএনপি নেতাদেরও নিজস্ব গ্রুপ রয়েছে।
এদিকে তৃণমূল থেকে উঠে আসা ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধূরী। শুরুতেই তিনি ছাত্রদলের রাজনীতি সাথে সক্রিয় ভূমীকায় অবতীর্ণ হোন। থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি থেকে তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের ফতুল্লা তথা নারায়নগঞ্জের রাজনীতিতে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের রাজনৈতিক পথচলাটাও দীর্ঘ দিনের। তবে দল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সে বড্ড পরিপক্ক। রাজনীতির শুরুতে তিনি জাতিয় পার্টি করতেন। তারপর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগদেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের ১৭ দিন পূর্বে নারায়নগঞ্জের রাজনীতিতে কিং মেকার খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলীর হাত ধরে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করেন।
বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার সাথে ফতুল্লাঞ্চলের বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে দূরুত্ব বাড়তে থাকে। সে সময় সে ফতুল্লাঞ্চলে নিজ প্রভাব বিস্তার লাভে বিএনপির বহু নেতা-কর্মী কে মিথ্যে মামলা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেই পুরোনো দন্ধ আবারো নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ফতুল্লা থানা বিএনপির এই গ্রুপিং রাজনীতির কারণে বিপাকে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতি নিয়ে সরজমিনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দেখা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এই গ্রুপিং রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তাই ফাতুল্লা থানা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী তার মিটিং মিছিলে না গেলেই তাকে প্রতিপক্ষ ভেবে কোনঠাসায় রাখার চেষ্টা করছে। তার প্রতিফলনে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অনেক বিএনপি নেতাকর্মীদের নামেও মামলা হয়েছে।
এদিকে ফতুল্লার সন্তান বিএনপি নেতা শিল্পপতি শাহাআলম একজন সফল ব্যবসায়ি যার কারণে অর্থ সম্পদের গরমে নেতাকর্মীদের কাছে টানতে পারেন খুব সহজেই। তিনিও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন এবং ইতিমধ্যে তার অনুসারীরা মাঠে প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছে।
সবাই মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ফতুল্লা থানা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অর্থাৎ সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি নিজে থেকে সংসদ নির্বাচনে কোনো মনোনয়ন চাইবে না। তবে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি নির্বাচন করবে।
অন্যথায় তিনি দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে নির্বাচন করবে। তিনি বর্তমানে তারেক রহমানের নির্দেশে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ফতুল্লার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন।
তাছাড়া বিএনপির আরেক নেতা যার বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবস্থিত হলেও বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে ফতুল্লায় তার নাম অকপটেই চলে আসে। তিনি হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতিতে তার অনেক ভুমিকা রয়েছে। এথানেও রয়েছে তার অনেক অনুসারী রয়েছে।
এদিকে তৃনমূলের দাবি মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই ফতুল্লা থানা বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং রাজনীতি হচ্ছে। তারা বলছেন, গ্রুপিং রাজনীতি করছেন বড় বড় নেতারা আর মাসুল দিচ্ছে তৃণমূলের কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফতুল্লা থানার একজন বিএনপি নেতা বলেন, আমরা যারা তৃণমূলে আছি আমাদের হয়েছে বিপদ। আমরা তো কোনো ব্যক্তির রাজনীতি করি না, এখন একজনের কাছে গেলে অন্যজন নারাজ হন। তাই আমরা কার কাছে যাবো বুঝতে পারছি না। আমরা দলকে ভালোবাসি তাই বিএনপির রাজনীতি করি। বড় বড় নেতাদের গ্রুপিং রাজনীতির কারণে আমরা পড়েছি বিপাকে।
মন্তব্য করুন